বিখ্যাত লেখকদের দৈনন্দিন রুটিন: Daily Habits of Successful Writer: It's all about Daily Routine!
successful people habits, daily routine of successful people, what successful people do আমাদের একটি ভুল ধারণা আছে যে, প্রতিভাবান মানুষরা কোনো রুটিন অনুসরণ করেননা। অগোছালো, লাগামহীন জীবনযাপন করলেই প্রতিভাবান হওয়া যায় এমন ভুল ধারণাও অনেকের আছে। পছন্দের লেখক ধূমপান করেন বলে, অনেকে লেখক হবার আশায় নিজেরাও সিগারেট খান। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি এমন নয়। সৃষ্টিশীল মানুষদের অনেকে জীবন কাটান কঠিন নিয়ম কানুনের মধ্যে। আবার অনেকের লাগামহীন জীবনের মাঝেও আছে একধরনের রুটিন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে Early to bed, early to rise Makes a man healthy wealthy and wise আমরা ছোটবেলা থেকেই এ কথা জানি। কিন্তু এ কথার পাকাপোক্ত অনুসারী ছিলেন নোবেল বিজয়ী আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, যার লেখনীতে বিংশ শতাব্দীর সাহিত্য নতুন মোড় নিয়েছিলো। জীবনকে তিনি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি’ এর লেখক প্রতিদিন সকাল ৫.৩০ থেকে ৬ টার মধ্যে উঠে যেতেন। তারপর লেগে যেতেন লেখালেখিতে। প্যারিস রিভিউকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হেমিংওয়ে বলেন, আমি যখন কোনো গল্প বা বইয়ের উপর কাজ করি তখন ভোরের প্রথম আলো ফোটার সাথে সাথে আমি লেখালেখি শুরু করে দিই। ঐ সময় আপনাকে বিরক্ত করার মতো কেউ থাকে না। পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে। হারুকি মুরাকামি হারুকি মুরাকামি জাপানের জনপ্রিয় একজন লেখক। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে, তিনি জীবিত ঔপন্যাসিকদের শ্রেষ্ঠদের একজন। মুরাকামিও নিয়মিত একটা নির্দিষ্ট ছক মেনে চলেন। মুরাকামি কোনো লেখক সংঘের অংশ নন। তার জীবন অনেকটা নিভৃতচারী। গানকে ভালোবাসেন। তার মতে লেখালেখিতে গান তাকে সাহায্য করে। তার লেখার প্রথম পাঠক তার স্ত্রী। যখন তিনি কোনো উপন্যাস লেখেন, তখন ভোর চারটায় উঠে লেখালেখি শুরু করে দেন। এরপর চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেখালেখি করেন। স্টিফেন কিং শাইনিং, ইট, গ্রিন মাইলের মতো বিখ্যাত বইয়ের লেখক স্টিফেন কিং। তাঁর বই রূপান্তরিত হয়েছে চলচিত্রে। অসংখ্য পুরষ্কার বিজেতা এই লেখক বছরের ৩৬৫ দিনই লেখালেখি করেন। প্রতিদিন দু’হাজার শব্দ করে লেখেন। লেখালেখির ব্যাপারে তার অভিমত, “আপনার শোবার ঘরের মতো আপনার লেখার ঘরও ব্যক্তিগত হওয়া উচিত। লেখার ঘরে আপনি স্বপ্ন দেখতে যান। আপনি প্রতিদিন একই রুটিনে লেখালেখি করেন যতক্ষণ না হাজার শব্দ আপনার কাগজে উঠে আসছে। অনেকটা শোবার আগে যেমন প্রতিদিন বিছানা তৈরি করেন, ঠিক তেমনই আপনি হাজার শব্দ লেখার একটা অভ্যাস তৈরি করেন, যাতে আপনি স্বপ্ন দেখার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। ঘুম এবং লেখালেখি দুটোতেই আমরা শরীরকে স্থির করি আর যৌক্তিক চিন্তাকে ভেদ করে নতুন দুয়ার উন্মোচন করি।” ডাব্লিও বি ইটস আরেক নোবেল বিজয়ী আইরিশ কবি ডাব্লিও বি ইটস এর জীবনও ছিলো ছকে বাঁধা। ইটস আরেক কবি এডইউন এলিসকে চিঠিতে লিখেছিলেন, আমি সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পড়ি। তারপর এগারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত লেখালেখি করি। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পড়ি। তারপর জঙ্গলে হাঁটতে যাই অথবা মাছ ধরি বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত। তারপর আমি চিঠি লিখি অথবা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত লেখালেখি করি। তারপর আমি রাতে খাবার আগে একটু বাইরে বের হই। এমনই রুটিন মেনে চলতেন ইটস। তার লেখার গতি ছিল খুবই ধীর। দিনে তিনি একটি কবিতার ৬ থেকে ৭ লাইন লিখতেন মাত্র। লিও তলস্তয় লিও তলস্তয় সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ওয়ার এন্ড পিস, আন্না কারেনিনার মতো বিখ্যাত কাজের স্রষ্টা তিনি। সাহিত্যপ্রেমীদের চোখের মধ্যমণি তলস্তয়। তিনিও তার ছকে বাঁধা জীবন থেকে বের হতে চাইতেন না। তার ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন, আমাকে প্রতিদিন লিখতে হয়। কাজের সাফল্যের জন্য নয়। এজন্য লিখি যাতে আমি আমার প্রতিদিনকার রুটিন থেকে বিচ্যুত না হয়ে যাই। মজার ব্যাপার হলো, তলস্তয় তার সকালের নাস্তায় দুটি ডিম সিদ্ধ খেতেন। এরপর বিকাল পাঁচটার আগে আর কিছু খেতেন না। ১৮৮০ সাল থেকে তিনি দুপুরের খাবার খাওয়া শুরু করেন। সকালে খাবারের সময় কোনো কথা বলতেন না। তবে দিনের লেখা শেষ হবার পর রাতে তিনি পরিবারের সাথে সময় কাটাতেন। কোনো অতিথি থাকলে তাদের সময় দিতেন। খালেদ হোসেনি খালেদ হোসেনি আফগান বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক। তার প্রথম বই ‘দ্য কাইট রানার’ নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার হয়েছিলো। তার তিনটি বইয়ের তিনটিই সফল। খালেদ হোসেনির মতে, লেখক হওয়ার জন্য আপনাকে লিখতে হবে। প্রতিদিন লিখতে হবে। আপনার ইচ্ছে হোক কিংবা না হোক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের জন্য লেখা। যে গল্পটি আপনি বলতে চান, পড়তে চান, সে গল্পটিই লিখুন। আরেকজন কী চায় তা জানা অসম্ভব। তাই এতে সময় নষ্ট করবেন না। সে বিষয় নিয়েই লিখুন যা আপনার আত্মার সাথে যুক্ত, যা আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখে” সনাতন পন্ডিতের পাঠশালার ভিডিওগুলো আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন এবং লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করে আমাদের অনুপ্রাণিত করুন। আমাদের ফেসবুক পেজ: http://facebook.com/sanatanpandit71 আমাদের ওয়েবসাইট: http://sanatanpandit.blogspot.com স্ক্রিপ্টঃ সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ